বগুড়া জেলা পুলিশের কঠোর প্রচেষ্টায় গলা কেটে লাশ পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় রহস্য উন্মোচন
০৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২০
বগুড়া ও জয়পুরহাট জেলার সীমান্তবর্তী এলাকা দুপচাঁচিয়া থানার চামরুল ইউনিয়নের বড়কোল গ্রামের মাঠ থেকে উদ্ধার করা গলাকাটা ও আগুনে পোড়ানো অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশের পরিচয় ও হত্যার রহস্য উন্মোচন করেছে বগুড়া জেলা পুলিশ। হত্যার রহস্য উন্মোচনের পাশাপাশি হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার কারণ এবং নিজেদের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। নিহত ব্যাক্তির নামঃ সেলিম প্রামানিক (৩২), পিতা- মোঃ কফির উদ্দিন, সাং- খিদিরপাড়া, থানা- দুপচাঁচিয়া, জেলা- বগুড়া। তিনি পেশায় একজন রং মিস্ত্রি। নৃশংশভাবে হত্যা এবং লাশ আগুনে পোড়া অবস্থায় উদ্ধারের প্রাথমিক বিবরণঃ- গত ০৫/০২/২০২০ইং তারিখ বেলা অনুমান ১২ ঘটিকার সময় জেলা পুলিশের টিম বগুড়ার কাছে সংবাদ আসে যে, বগুড়ার দুপচাঁচিয়া ও জয়পুরহাটের খেতলাল সীমান্তবর্তী এলাকার দুপচাঁচিয়া থানার বড়কোল গ্রামের ফসলের মাঠে আগুনে পোড়া অজ্ঞাত ব্যাক্তির লাশ পড়ে আছে। পুলিশ অজ্ঞাত ব্যক্তির পোড়া লাশ উদ্ধারের সময় ০৬(ছয়) টি কনডম ও একটি চাকু উদ্ধার করে। লাশ আগুনে পুড়িয়ে ফেলার কারনে শতশত মানুষ দেখলেও কেউ তাকে চিনতে পারে নাই। নৃশংস এবং বিভৎস এই হত্যাকান্ড স্থানীয় জনগনকে হতবাক এবং বিষ্মিত করে তোলে। লাশ উদ্ধারের সময় আমি নিজেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হই এবং পুলিশের টিম বগুড়াকে দ্রুত সময়ের মধ্যে নিহতের পরিচয় সনাক্ত এবং হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করতে নির্দেশ দেই। ঐ দিন থেকে ডিবি সহ পুলিশের একাধিক টিম মাঠে নামে এবং ঘটনার সহিত জড়িত থাকার অভিযোগে ০২(দুই) জনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতরা হলোঃ ১। আব্দুর রহমান, ২। রুপালী বেগম। যে কারণে সেলিমকে নৃশংসভাবে হত্যারপর লাশ আগুনে পোড়ানো হয়ঃ- গ্রেফতারকৃত আসামীদ্বয়ের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ১নং আসামী রুপালীর স্বামী দেড় বছর যাবত সৌদি আরব থাকে। নিহত সেলিম এবং রুপালীর মধ্যে ছোট বেলায় প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্ত তাদের দুজনের বিয়ে অন্যত্র হলেও মোবাইলে যোগাযোগ অব্যহত ছিল। রুপালীর স্বামী বিদেশ চলে যাওয়ার পর দুজনের পরকীয়া আরো গভীর রুপ ধারন করে। তারা বিভিন্ন সময়ে একান্তে মিলিত হয়। একপর্যায়ে সেলিম রুপালীকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু রুপালী প্রস্তাব নাকোচ করে। সেলিম আগে থেকেই তাদের একান্তে মিলিত হওয়ার দৃশ্য গুলি গোপনে ভিডিও করে রাখে। রুপালী সেলিমকে বিয়ে করতে অস্বীকার করলে ক্ষুদ্ধ হয় সেলিম। ইমোর মাধ্যমে সেলিম ও রুপালীর একান্তে মিলিত হওয়ার দৃশ্য সেলিম সৌদিতে অবস্থানরত রুপালীর স্বামী ইকরামুলের কাছে পাঠায়। রুপালীর স্বামী ইকরামুল বিষয়গুলো রুপালীকে জানায়। রুপালী সেলিমকে সন্দেহ করে এবং তাকে শায়েস্তা করার পরিকল্পনা করতে থাকে। সেলিম রুপালীকে বিয়ের প্রস্তাব দিতে থাকে এবং হুমকি দেয় যে তাকে বিবাহ না করলে তার কাছে থাকা ভিডিও ফুটেজগুলি ফেসবুকে ফেক আইডি খুলে ইন্টারনেটে ছেড়ে দিবে। এবিষয়গুলি নিয়ে রুপালী তার বাবা আব্দুর রহমানের সাথে পরামর্শ করে এবং সেলিমকে শায়েস্তা করার পরিকল্পনা করতে থাকে। পরিকল্পনা অনুযায়ী সেলিমকে খুন করার জন্য রুপালীর পূর্বপরিচিত একজন খুনির সাথে সলাপরামর্শ করে বিয়েতে রাজি হওয়ার পাশাপাশি পূর্বপরিচিত খুনির সাথে খুনের কাজে ব্যবহৃত উপকরন কেনার জন্য ২০০০/-(দুই হাজার) টাকা প্রদান করে। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী গত ০৪/০২/২০২০ ইং তারিখ সন্ধ্যা অনুমান ০৬.৩০ ঘটিকার সময় রুপালী সেলিমকে পালিয়ে তার বান্ধবির বাড়ীতে গিয়ে বিয়ে করার জন্য সেলিমকে মোবাইল ফোনে ডেকে নেয়। তারপর তারা গোপনে বাড়ী হতে বের হয়ে ভ্যানযোগে ৪/৫ কিলোমিটার গিয়ে পাঁকা রাস্তা থেকে নেমে পায়ে হেঁটে মাটির রাস্তা দিয়ে জয়পুরহাট জেলার খেতলাল থানার বেরুজ গ্রামের দিকে যেতে থাকলে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী রুপালীর বাবা এবং তার সহযোগী ০৩(তিন)জন রুপালী ও সেলিমকে কথা আছে বলে ডেকে রাস্তা থেকে মাঠের মধ্যে নিয়ে যায়। রুপালী সেলিমকে তার বাবা ও সহযোগী খুনীদের হাতে তুলে দিয়ে সে বাড়ীতে চলে যায়। আব্দুর রহমান ও তার সহযোগী ০৩জন খুনী সেলিমকে বড়কোল ও বেরুজ গ্রামের বিস্তৃর্ন ফসলের মাঠের মাঝে নিয়ে যায়। সেখানে আসামীরা সেলিমকে হাত পা রশি দিয়ে বেঁধে মুখ ও মাথা স্কচটেপ দিয়ে পেঁচিয়ে গলা কেটে হত্যা করে। এরপর লাশ যেন কেউ চিনতে না পারে সে জন্য সেলিমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনসহ তার অন্যান্য পরিধেয় জিনিপত্র তার বুকের উপর রেখে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়ে তারা পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়ার পূর্বে হত্যাকান্ড ভিন্নথাতে প্রবাহের জন্য ০৬ টি কনডম ঘটনাস্থলের পার্শ্বে ফেলে যায়। এঘটনায় মৃত সেলিমের বাবা কফির উদ্দিন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে দুপচাঁচিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। লাশ উদ্ধারের পরপরই বগুড়া ডিবিসহ জেলা পুলিশের কয়েকটি টিম ঘটনার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই নিহতের পরিচয় সনাক্ত এবং হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ০২জন আসামীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। গ্রেফতারকৃত আসামীরা পুলিশের নিকট ঘটনার বিষয়ে নিজেদের সম্পৃক্ততাসহ ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা দেয়।