মান্দায় মোবারক মার্ডারের রহস্য উদ্ঘাটন।
০৪ মার্চ, ২০২০
মোবারক মার্ডার সূত্রঃ- মান্দা থানার মামলা নং-০৫, তাং-০৫/১২/২০১৯ ইং, ধারা-৩৬৪/৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড। মান্দা থানাধীন ভালাইন ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ মোঃ ফয়েজ উদ্দিন ইং ০৪-১২-২০১৯ তারিখ বেলা অনুামন ১১.০০ ঘটিকায় মোবাইল ফোনে মান্দা থানার অফিসার ইনচার্জ কে জানায় যে, মান্দা থানাধীন লক্ষীরামপুর সাকিনের আত্রাই নদীর মদনচক দই নামক স্থানে একটি অর্ধগলিত অজ্ঞাতনামা পুরুষের মৃতদেহ ভাসিতেছে। উক্ত সংবাদের ভিত্তিতে মান্দা থানার পুলিশ দ্রæত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং নদীতে ভাসমান অর্ধগলিত অজ্ঞাত পুরুষের লাশ ইং ০৪-১২-২০১৯ তারিখ বেলা ১২.১৫ ঘটিকায় উদ্ধার করে সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত পূর্বক লাশ ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করে। অর্ধগলিত লাশের পরিচয় সনাক্তকরণের লক্ষ্যে বেতার বার্তা প্রেরণসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সংবাদপত্রে ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়। দৈনিক পত্রিকার মাধ্যমে জানিতে পারিয়া পরের দিন ইং ০৫-১২-২০১৯ তারিখ মোছাঃ কাজলী নামে একটি মেয়ে থানায় আসিয়া মৃত ব্যক্তির পরিহিত কাপড় চোপড় ও ছবি দেখিয়া মৃত ব্যক্তিটি তাহার পিতা মোবারক হোসেন (৬২) বলিয়া সনাক্ত করেন। ঐ দিন ইং ০৫-১২-২০১৯ তারিখ ভিকটিমের মেয়ে কাজলী তাহাদের সাথে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের প্রতিপক্ষ তাহার নিকট প্রতিবেশি ১। মোঃ খোশবর (৫৮) পিতা-আলহাজ আব্দুর রহিম, সাং-চকসাবাই পূর্ব পাড়া, থানা-মান্দা,জেলা-নওগাসহ ০৫ জন আসারি নাম উল্লেখ করিয়া অপহরন পূর্বক হত্যা করত লাশ গুমের এজাহার দায়ের করেন। তাহার এজাহারের প্রেক্ষিতে মান্দা থানার মামলা নং-০৫, তারিখ ০৫-১২-২০১৯ খ্রিঃ, ধারা- ৩৬৪/৩০২/২০১/৩৪ দন্ডবিধি রুজু হয়। ভিকটিম এর মেয়ে মোছাঃ কাজলী এজাহারে উল্লেখ করেন যে, তাহার পিতা ভিকটিম মোবারক হোসেন একটি ফৌজদারি মামলায় হাজিরা দেওয়ার জন্য ইং ২৭-১১-২০১৯ তারিখ সকালে নওগাঁ কোর্টে যায়। হাজিরা শেষে সে তাহার শ্বশুর বাড়ি নওগাঁ উকিলপাড়ায় রাত্রি যাপন করেন। পরের দিন ইং ২৮-১১-১-২০১৯ তারিখ সকাল অনুমান ০৯.০০ ঘটিকায় ভিকটিম মোবারক হোসেন কোর্টে কাজ আছে বলিয়া শ্বশুর বাড়ি হইতে বাহির হয়। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হয় কিন্তু ভিকটিম তাহার নিজ বাড়ি/শ্বশুর বাড়িতে না ফেরায় এবং তাহার মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তাহার আত্মীয়-স্বজন ভিকটিমকে বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুজি করেন। ভিকটিমের খোঁজ না পাওয়ায় ভিকটিমের মেয়ে কাজলী ইং ২৯-১১-২০১৯ তারিখ নওগাঁ সদর মডেল থানায় একটি নিখোঁজ জিডি করেন। মামলা রুজুর পর মান্দা থানা পুলিশ হত্যাকান্ডের মূল উদ্ঘাটনে বিভিন্ন ভাবে তদন্ত শুরু করে। এই সময় মান্দা থানা পুলিশ পুলিশ সুপার, নওগাঁ মহোদয়ের তড়িৎ পদক্ষেপে ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের কললিষ্ট প্রাপ্ত হয়। ভিকটিমের কললিস্টের নিবিড় পর্যালোচনা এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিশ্লেষনে মামলার তদন্তের মোড় ঘুরে যায়। উক্ত মোবাইলের কললিস্টের সূত্র ধরে ০১৭৮৮-৮৬৮৩৩৩ নম্বর এর ব্যবহারকারীকে প্রধান সন্দিদ্ধ ধরে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালিত হইতে থাকে। কললিস্টের সূত্র ধরেই ঘটনার সহিত জড়িত এজাহার বহির্ভূত ০৫(পাঁচ) জন সন্দিদ্ধ আসামি ১। মোছাঃ জোসনা বেওয়া (৬৫), ২। মোছাঃ মোসলিমা বেগম (৩৮), ৩। মোছাঃ জেসমিন বেগম (২৮), ৪। মোঃ আলামিন (২৭), ৫। মোঃ ইউসুফ আলী (৪২) দের ইং ০৯-১২-২০১৯ তারিখ মহাদেবপুর থানাধীন গোপিনাথপুর গ্রাম হইতে আটক করা হয়। তাহারা সকলেই পুলিশের নিকট উক্ত ঘটনার সহিত সম্পৃক্তার কথা স্বীকার করে। তাহাদের দেওয়া তথ্য এবং তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে মান্দা থানা পুলিশের একটি দল ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ হইতে মামলার প্রধান আসামি মোছাঃ আঙ্গুরী বেগম (৩৫) কে ১০-১২-২০১৯ তারিখ আটক করা হয়। আঙ্গুরী বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায় যে, ভিকটিম মোবারক হোসেন এর সহিত তাহার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ হয়। ঘটনার দিন ইং ২৮-১১-২০১৯ তারিখ ভিকটিম মোবারক হোসেন আসামি আঙ্গুরীর সহিত অনৈতিক কাজ করার উদ্দেশ্যে বেলা অনুমান ১৩.০০ ঘটিকায় মহাদেবপুর থানাধীন গোপীনাথপুর গ্রামস্থ আসামি আঙ্গুরী বেগম এর বাড়িতে যায়। ভিকটিম সেখানে যৌন উত্তেজক ঔষধ সেবন করিয়া অসুস্থ্য হইয়া মৃত্যুবরণ করে। তখন উপর্যুক্ত সকল আসামির সহায়তায় ভিকটিমের লাশ রাতের অন্ধকারে বাড়ি হইতে প্রায় ৩০০ মিটার দুরে আত্রাই নদীতে ফেলিয়া দেয়। পরবর্তীতে আসামি আঙ্গুরী উপরোক্ত ঘটনা উল্লেখ করিয়া বিজ্ঞ আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দী প্রদান করেন। পুলিশের সঠিক তদন্ত এবং তড়িৎ পদক্ষেপের কারণে দ্রুত মামলাটির রহস্য উদ্ঘাটিত হইয়াছে, ঘটনার সহিত জড়িত আসামিরা আইনের আওতায় আসিয়াছে এবং হত্যার মামলার এজাহারে উল্লিখিত ৫ জন নিরপরাধ ব্যক্তি হত্যার দায় ও হয়রানী হইতে রেহায় পাইয়াছে।