একটি চাঞ্চল্যকর হত্যা কান্ডের রহস্য উদঘাটনের কাহিনী

২২ জুলাই, ২০১৯

ছেলেটির নাম ছিল বরুন সরকার। সে প্রতিদিন  অটো ভ্যান  চালিয়া জীবিকা  নির্বাহ  করিত। তিনি জীবিকা  নির্বাহের তাগিদে প্রতিদিনের ন্যায় ইং ০২/০৯/১৮ তারিখ  বিকাল অনুমান ০৫.০০ ঘটিকার সময়  ভ্যান গাড়ী সহ বাড়ী হইতে বাহির হয়। কিন্তু  ঐদিন  তাহার নিজ  বাড়ীতে  ফিরে না গেলে তাহার  আত্বীয় স্বজনেরা  বিভিন্ন স্থানে  খোজাখুজি করে  কোথাও  না পাইয়া  অবশেষে ০৩/০৯/১৮  তারিখ  সকালে সিংড়া  থানায়  হাজির হইয়া বরুনের  ভগ্নিপতি  শ্রী নিরেনচন্দ্র সরকার  থানায় একটি হারারো জিডি করেন।  যাহার জিডি নং-১৩৯ তারিখ তারিখ ০৩/০৯/১৮ খ্রিঃ ।  ভাগ্যের  নির্মম পরিহাস  ঐদিন  ভিকটিম বরুনের  স্ত্রী সত্য রানী   দুপুর  অনুমান ০২.০০ ঘটিকার সময়   সিংড়া  থানা হইতে বাড়ী  যাওয়ার পথে  জানিতে পারেন যে, সিংড়া  টু কালিগঞ্জ রোডে  বড়- চৌগ্রামস্থ  জনৈক হেলাল কাজী  @  হেলুর পুকুরের  পূর্ব পার্শ্বে  পাকা রাস্তা সংলগ্ন কাদের আলী শেখের  বর্গাকৃত আমন ধানের   ক্ষেতে  পানিতে  একজনের  মৃতদেহ পড়িয়া আছে।  উক্ত সংবাদের  প্রেক্ষিতে  বরুনের  মামা শ্বশুড়  এবং  প্রতিবেশী  ভাই  শ্রী কৃষ্ণ চন্দ্র সরকার ও নরেশ চন্দ্র  সরকার  সেখানে  গিয়ে  লাশ দেখে   বরুনকে  সনাক্ত করে। ইং ০২/০৯/১৮ তারিখ রাত্রি  ০৮.০০ ঘটিকা হইতে  ০৩/০৯/১৮ তারিখ বিকাল ০২.০০ ঘটিকার  মধ্যে  যেকোন  সময়  অজ্ঞাতনামা  কে বা কাহারা  ভ্যান চালক বরুনকে  হত্যা করিয়া  ব্যাটারী চালিত ভ্যান নিয়া  চলিয়া যায়। উক্ত ঘটনার বিষয়ে  বরুনের  স্ত্রী  সত্য রানী  থানায়  বাদী হয়ে  এজাহার দায়ের করেন। সিংড়া  থানার  অফিসার  ইনচার্জ  সাহেব মামলাটি রুজু  করিয়া  তদন্তভার এস আই  শ্রী  সুব্রত কুমার মাহোত এর উপর অর্পন করেন।তখন থেকে  মামলার তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়। তদন্তকালে  মৃত বরুনের  লাশের পাশে পড়ে থাকা  একটি মোবাইল লইয়া পর্যালোচনা শুরু হয়,দেখা যায়  উক্ত মোবাইল ফোনে  ব্যবহৃত সিম ২টি যথাক্রমে মোঃ জাহিদুল প্রাং পিতাঃ মোঃ ছহির উদ্দিন প্রাং সাং, তেঘইর এবং মোঃ লোকমান সরদার পিতাঃ ময়েজ সরদার ,সাং বনকুড়ি  উভয় থানাঃ সিংড়া জেলাঃ নাটোর দের নামে রেজিষ্ট্রেশন করা। এক পর্যায়ে তাহাদের জিজ্ঞাসাবাদ করিয়া আরো জানা যায়  সিম ২টি সহ ১টি মোবাইল জাহিদুলের ছেলে মোঃ উজ্জল হোসেন পিতাঃ  জাহিদুল প্রাং এর নিকট ছিল। উজ্জল বাড়ীতে না থাকায় তার পিতাঃ জাহিদুল এবং উজ্জলের স্ত্রী জোস্নাদ্বয়কে জিজ্ঞাসাবাদ করিলে তারা জানায় যায়,  উজ্জল গত ০২/০৯/১৮ ইং তারিখ সকাল বেলা বাড়ী  হইতে বাহির হয় সারাদিন বাড়ীতে আসেনি। ঐ দিন দিবাগত রাত্রী অনুমান ০১.০০/০২.০০ টার সময় বাড়ীতে আসে। বাড়ীতে আসার পর কোন খাবার খায়নি। তার পর গত ০৪/০৯/১৮ইং তারিখ বাড়ী থেকে বের হয়ে যায় আর ফিরে  আসেনি। তাহার স্ত্রী জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় উজ্জলের সাথে একই গ্রামের সবুজ পিতাঃ আয়েন চলাফেরা করে। সবুজের মোবাইল নাম্বার ০১৭০৩২৩০০৩৮সংগ্রহ পূর্বক পর্যালোচনায় দেখা ঐ নাম্বারের সাথে ০১৭৩৭৮৯৪৫৩৬ নম্বরের ঘটনার দিন ২৬ বার যোগাযোগ হয়। মোবাইল সুত্র ধরে আসামি মোমিন কে ধৃত করা হয় এবং মোবাইল জব্দ করা হয়। তদন্তকারী  অফিসার  এক পর্যায়ে আসামী পলাশ এবং উজ্জলকে ধৃত করেন। পলাশের দেওয়া তথ্য মোতাবেক  সিংড়া থানার  পুলিশ ভিকটিম বরুনের  ছিনতাইকৃত ভ্যানটি বগুড়া থানাধীন নন্দীগ্রামস্থ বিশা গ্রামের সাইফুলের বাড়ী থেকে উদ্ধার পূর্বক জব্দ করেন।তখন  অসামী মোঃ  উজ্জল আলী (২৮) পিং মোঃ জাহিদুল  ইসলাম উভয় সাং তেঘইর,  মোঃ মমিন আলী (২৫) পিতাঃ মোঃ ফরিদ উদ্দিন সাং মালকুর  ঘটনার বিষয়ে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি বিজ্ঞ আদালতে প্রদান করে। একপর্যায়ে মৃত বরুনের  ময়না তদন্তের রির্পোট পাওয়া যায়। ময়না তদন্তকারী  ডাক্তার  ময়না তদন্তের রির্পোটে উল্লেখ  করেন যে, উবধঃয রহ  সু ড়ঢ়রহড়হ ধিং ফঁব ঃড় ধংঢ়যধীরধ ধং ধ ৎবংঁষঃ ড়ভ ঃযৎড়ধঃষরহম ফঁব ঃড় রহলঁৎু ড়হ (১) যিরপয ধিং ধহঃরসড়ৎঃবস ধহফ যড়সরপরফধষ রহ হধঃঁৎব.মামলাটি তদন্তকারী অফিসার গোপন ও প্রকাশ্যে তদন্ত করেন। তদন্তে  প্রাপ্ত সাক্ষ্য প্রমানে ঘটনার পারিপার্শ্বিকতায়, সাক্ষীদের জবানবন্দী পর্যালোচনায় আসামীদের দেওয়া ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারার জবানন্দী পর্যালোচনায় আলামত দৃষ্টে জানা যায় যে, তদন্তে প্রাপ্ত আসামীরা পুর্ব পরিকল্পিত ভাবে ভ্যান ছিনতাই করবে মর্মে সিন্ধান্ত নেয়। সেই পরিকল্পনা আনুযায়ী আসামী  উজ্জল এবং সবুজ সকালে বাড়ী হইতে বাহির হয়। তারা প্রথমে ২জন একডলা বাজারে গিয়ে নাস্তা করে। তার পর সেখানে কিছু সময় অবস্থান করার পর তারা কালিগঞ্জ যায় সেখান থেকে তারা প্রতিস্বর যায়। প্রতিস্বর থেকে পুনরায় তারা বিকাল অনুমান ০৪.০০/০৪.৩০টার সময় আবার কালিগঞ্জ আসে এবং সেখানে অবস্থান করতে থাকে এবং ভ্যান ছিনতাই করার পরিকল্পনা করতে থাকে এবং শিকার টারগেট  করতে থাকে। অএ মামলার ভ্যান  চালক ভিকটিম বরুন সরকার ভ্যান সহ  বিকাল অনুমান ০৫.১৫/০৫.৩০ টার সময় একডালা বাজার হতে যাত্রী নিয়ে কালিগঞ্জ বাজারে গেলে সেখান থেকে অনুমান ০৫.৩০/০৫.৪৫ টার সময় আসামী মোঃ উজ্জল এবং সবুজ , ভিকটিম বরুনের ভ্যানটি ভাড়া করে,প্রথমে একডালা বাজারে আসে । সেখানে আসার পর সবুজ , ভিকটমকে প্রস্তাব দেয় সে তার মামাতো ভাই মোমিনের নিকট টাকা পাবে সিংড়া দমদমা যাবে । কিন্তু ভ্যান চালক ভিকটিম বরুন যেতে না চাইলে সবুজ চৌগ্রাম পর্যন্ত যাওয়ার প্রস্তাব দেয় এবং বেশি ভাড়া দেওয়ার লোভ দেখায়। অনুমান ০৬.০০/০৬.৩০ সময় আসামী সবুজ এবং উজ্জল এবং ভিকটিম বরুন ভ্যানসহ চৌগ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে। যাওয়ার পথে রাস্তায় বিভিন্ন অজুহাতে আসামী সবুজ রাস্তায় ভ্যান দাড় করায় এবং মোবাইল ফোনে বারবার আসামী মোঃ মোমিনের সাথে কথা বলতে থাকে এবং আসামী মোমিন এবং পলাশের অবস্থান জানতে চায়। আসামী পলাশ এবং মোমিন পূর্ব হইতে ছোটচৌগ্রাম এবং বড়চৌগ্রাম এর মাঝামাঝি রাস্তার ফাকা জায়গায় অবস্থান নেয়। সন্ধ্যা রাত্রী অনুমানিক ১৯.৩০/২০.০০ টার সময় আসামী উজ্জল এবং সবুজের বহনকারি ভ্যানটি আসামী মোমিনের কাছে পৌছামাত্র আসামী সবুজ বলে ঐযে আমার মামাতো ভাই ভ্যান থামা। তখন ভ্যান চালক ভিকটিম বরুন সরকার ভ্যানের গতি কমানোর সাথে সাথে আসামী সবুজ ভ্যান থেকে নেমে আসামী উজ্জল , পলাশ এবং মোমিনের সহায়তায় ভ্যান কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে ভিকটিম ভ্যান চালক বাধা দিলে আসামী মোমিন এবং সবুজ মিলে ভিকটিম বরুন সরকারের গলা চেপে ধরে এবং আসামী পলাশ এবং উজ্জল , ভিকটিম বরুনের পা চেপে ধরে। ভিকটিমের গলা চেপে ধরার কারনে শ্বাস রোধ হয়ে মারা গেলে ,আসামী  ১। মোঃ সবুজ আলী (৩০) পিতাঃ আয়েনুদ্দিন ২। মোঃ উজ্জল হোসেন (২৫) পিতাঃ মোঃ জাহিদুল প্রাং উভয় সাং তেঘইর ৩। মোঃ মোমিন আলী (২৫) পিতাঃ মোঃ ফরিদুল ইসলাম ফরিদ ৪। মোঃ পলাশ আলী (২২) পিতা ঃ মৃত আলতাব @ আলতাফ উভয় সাং মালকুর থানা ঃ   সিংড়া জেলা ঃ নাটোর ভিকটিম বরুনের লাশ গোপন করার উদেশ্যে তারা সবাই ধরাধরি করে ভিকটিমের লাশ রাস্তার নিচে ঝোপের ভিতর দিয়ে ধানের জমির পানিতে ঢুবিয়ে রাখে। লাশ নিচে নামানোর সময় আসামী মোঃ উজ্জলের নিকট থাকা কালনীল রংয়ের পুরোনো ভাঙ্গা ডরহসধী মোবাইল যার সাথে সিম নং ০১৭৬২২৮২১৪৯ এবং ০১৭২৮৭৩৯১০০ মোবাইল ফোনটি লাশ হইতে দেড় ফিট দুরে শুকনা জায়গায় পড়ে যায় । লাশ ফেলে দেওয়ার পর আসামীরা ভিকটিমের মোটর চালিত অটো ভ্যান  গাড়িটি তারা সিংড়ার দিকে যায় সিংড়া  পার্ক পয়েন্ট এর দিকে যায় , সরকার পাড়া এবং রাখালগাছার দিকে ভ্যান নিয়ে ঘোরাঘুরি  করতে থাকে  উদ্দেশ্য সময় কাটানোর , যাহাতে মোমিনের শ্বশুর বাড়ীর লোকজন ঘুমিয়ে পড়লে রাত্রী অনুমান ১০.০০/১১.০০ টার দিকে তারা ভ্যান মোমিনের শ্বশুরের বাড়ীতে রাখে। ছিনতাইকৃত ভ্যানটি আসামি পলাশ ১৫ হাজার টাকায় কিনে নেওয়ার জন্য রাজি হয় এবং তৎক্ষণিক ৪ হাজার টাকা দেয় এবং তারা সকলেই ১ হাজার টাকা করে ভাগ করে নেয়। পরের দিন ০৩/০৯/১৮ ইং তারিখ বেলা অনুমান ১৩.৩০/১৪.০০ দিকে গরু চরানোর রাখালেরা লাশ দেখতে পেয়ে রাস্তা  দিয়ে যাওয়া লোকজনদের বললে লাশ পানিতে পড়ার থাকার বিষয়টি এলাকায় প্রচার হয় এবং সংবাদটি লোক মারফত থানায় পৌছিলে এস আই মোঃ আনহার হোসেন সঙ্গীয় ফোর্সসহ সেখানে উপস্থিত হয়ে মৃতের সুরতহাল রির্পোট প্রস্তুত পূর্বক ময়না তদন্তের জন্য প্রেরন করে।  তদন্তে সাক্ষ্য প্রমানে ঘটনার পারিপাশ্বিকতায়  ১। মোঃ সবুজ আলী (৩০) পিতাঃ আয়েনুদ্দিন@ আয়েন ২। মোঃ উজ্জল হোসেন (২৫) পিতাঃ মোঃ জাহিদুল প্রাং উভয় সাং তেঘইর ৩। মোঃ মোমিন আলী (২৫) পিতাঃ মোঃ ফরিদুল ইসলাম ফরিদ ৪। মোঃ পলাশ আলী (২২) পিতা ঃ মৃত আলতাব @ আলতাফ উভয় সাং মালকুর থানা ঃ   সিংড়া জেলা ঃ নাটোরগণেরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ভ্যান ছিনতাইয়ের জন্য ভিকটিম বরুন সরকারের ভ্যান ভাড়া করে ০২/০৯/১৮ইং তারিখ সন্ধা অনুমান ১৯.৩০/২০.০০ টার সময় চৌগ্রাম টু কালিগঞ্জ রোডের ছোটচৌগ্রাম এবং বড়চৌগ্রাম এর মাঝামাঝি জনৈক হেলাল হাজীর পুকুরের পূর্ব পাশে ফাকা জায়গায় পৌছামাত্র আসামীরা ভিকটিম বরুনের গলা চেপে ধরে হত্যা করে লাশ গোপন করার উদ্দেশ্যে মৃত বরুনের লাশ রাস্তার পাশে জঙ্গলের ভিতর দিয়ে রাস্তার পাশে ধানের জমির পানিতে ঢুবিয়ে দেয় এবং ভিকটিমের ভ্যান নিয়ে চলে যায় । উল্লেখিত আসামীদের বিরুদ্ধে দঃ বিঃ ৩০২/৩৪/২০১ ধারার অপরাধ প্রাথমিক ভাবে প্রমানিত হইয়াছে। এসআই সুব্রতো কুমার মাহাতো উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি চাহিয়া এম/ই দাখিল করেন। তাহার নিকট অত্র মামলা তদন্তাধীন থাকা অবস্থায় জেলা আদেশ অনুঃ খ্রিঃ মূলে নাটোর  সদর থানায় বদলী হওয়ায়  মামলাটির পরবর্তী তদন্তভার অফিসার ইনচাজ জনাব মোঃ মনিরুল ইসলাম সাহেব এসআই মোঃ আহসানুজ্জামান এর উপর অর্পন করেন। তিনি মামলার তদন্তভার গ্রহন করিয়া  আসামীদের পুনুরায় নাম ঠিকানা যাচাই করেন।  মামলা সংক্রান্তে  জব্দকৃত অটো ভ্যান বিজ্ঞ আদালতের আদেশে বাদীনির জিম্মায়  প্রদান করেন।   তদন্তশেষে   আসামী ১। মোঃ সবুজ আলী (৩০) পিতাঃ আয়েনুদ্দিন ২। মোঃ উজ্জল হোসেন (২৫) পিতাঃ মোঃ জাহিদুল প্রাং উভয় সাং তেঘইর ৩। মোঃ মোমিন আলী (২৫) পিতাঃ মোঃ ফরিদুল ইসলাম ফরিদ ৪। মোঃ পলাশ আলী (২২) পিতা ঃ মৃত আলতাব @ আলতাফ উভয় সাং মালকুর থানা ঃ   সিংড়া জেলা ঃ নাটোরগণের বিরুদ্ধে বাদী আনীত অভিযোগে বর্নিত ৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড ধারার অপরাধ প্রাথমিক ভাবে সত্য বলিয়া প্রতিয়মান হওয়ায় উপরোক্ত আসামীদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য আদালতে বিচারের নিমিত্তে সিংড়া থানার অভিযোগ পত্র  দাখিল করেন।







সর্বশেষ সংবাদ