একটি শিশু হত্যার রহস্য উদঘাটনের কাহিনী
২২ জুলাই, ২০১৯
শিশুটির নাম জুয়েল , তাহারা দুই ভাই । তাহাদের বাড়ী সিংড়া থানাধীন ইটালী ইউনিয়নের কুমগ্রাম গ্রামে। তাহাদের পিতা মুক্তার হোসেন গত ২৬/১০/১৮ তারিখ সন্ধ্যা ০৫.৩০ ঘটিকার সময় তাহার বড় ছেলে রাসেল (১০) এবং ছোট ছেলে জুয়েল(০৮) কে সঙ্গে করে কুমগ্রাম বাজারে যায়। সে কুমগ্রাম বাজার হতে চারটি ডিম কিনে দুই ছেলেকে সহ বাড়ীতে পাঠাইয়া দেয়। ছেলেরা ডিম লইয়া বাড়ীতে গেলে দুইটি ডিম খারাপ দেখা দেয় তখন শিশুটির মা ছোট ছেলে জুয়েলকে কুমগ্রাম বাজারে তাহার স্বামীর নিকট দুইটি ডিম বদলানোর জন্য পাঠাইয়া দেয়। মায়ের কথা মোতাবেক ছেলে জুয়েল বাড়ীর মধ্যে হইতে বাহির হইয়া পাশ্বে রাস্তার উপর বড় ছেলে রাসেলকে দেখিয়া ডিম দুটি বদলানোর জন্য কুমগ্রাম বাজারে পাঠাই। তখন ছোট ছেলে জুয়েল রাস্তার উপর দাড়াইয়া থাকে সেখানে তাহার প্রতিবেশী শ্রী দ্বীজেন ও সীমান্ত দাড়াইয়া ছিল। মুক্তারের বড় ছেলে রাসেল ডিম পাল্টাইয়া আনার সময় উক্ত রাস্তার উপরে দীজেন , সীমান্ত এবং জুয়েলকে দেখিতে না পাইয়া তখন বড় ছেলে রাসেল বাড়ীতে ডিম দিয়া তাহার ছোট ভাই জুয়েলকে খোজার জন্য বাহির হয় কিন্তু খোজ করিয়া না পাইয়া কুমগ্রাম বাজারে পুনুরায় খোজ করিতে যায়। সবাই জুয়েলকে খোজ করিয়া না পাইলে জুয়েলদের বাড়ীতে অনেক আত্বীয় স্বজন আসে। আগে থেকেই দ্বিজেন সন্ধ্যা রাত্রিতে একশত টাকার নোট দিয়া সিগারেট কিনিয়া লয় এবং জুয়েলকে বকশিস দেয়। তদুপরি দ্বিজেন এর বাড়ীতে এবং সীমান্তের বাড়ীতে শুধু তার নিজ বাড়ীতে একা ছাড়া আর কেহ না থাকায় এবং তাহাদের গতিবিধি সন্দেহজনক হওয়ায় তাহাদেরকে জুয়েলের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করিলে তাহারা আবোল তাবোল কথাবার্তা বলে। ঐ সময় বাদীদের গ্রামের জামাই নিপেন নেশাগ্রস্থ অবস্থায় এবং অসংলগ্ন কথায় তাকেও সন্দেহ হয়। জুয়েলকে খোজাখুজির এক পর্যায়ে ২৮/১০/ ১৮ তারিখে রাত্রি ০৭.৩০ ঘটিকার সময় জুয়েলের লাশ তাহার বাড়ীর পশ্চিমে বনকুড়ি গ্রামগামী কাচা রাস্তার উপরে থাকা কালভাট হইতে অনুমান ২০০ গজ পশ্চিমে রাস্তার দক্ষিনে ০৩ হাত দুরে জয়ন্ত এর নালা জমিতে কচুরিপানা দিয়ে ঢাকানো অবস্থায় পাওয়া যায়। জুয়েলকে মৃত অবস্থায় পাওয়ার সময় গলা হইতে মাথা পর্যন্ত গলিত ছিল। তখন গ্রামের লোকজন বাদীর ছেলের মৃত দেহ দেখে পুলিশকে সংবাদ দিলে পুলিশ জুয়েল(৮) এর লাশ উদ্ধার করিয়া সুরতহালসহ যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করেন। তখন শিশুটির পিতা মুক্তার হোসেন থানায় ইং ৩০/১০/১৮ খ্রিঃ এজাহার দায়ের করিলে অফিসার ইনচার্জ সাহেব মামলাটি রুজু করিয়া তদন্তভার এসআই মোঃ আঃ মজিদ এর উপর অর্পন করেন। তিনি তদন্ত ভার গ্রহন করিয়া সরজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন, খসড়া মানচিত্র অংকন, সূচিপত্র প্রস্তুত , এবং চৌহদ্দি নির্নয় করেন। আসামী দ্বিজেনকে গ্রেফতার করেন এবং তাহার দোষ স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারা মোতাবেক লিপিবদ্ধকরনের জন্য ব্যবস্থা গ্রহন করেন। তদন্তে প্রাপ্ত আসামী ২। মোঃ মনি সরকার এবং হীরা সরকার দ্বয়কে গ্রেফতার করেন।সোর্স নিয়োগ করেন। ময়না তদন্ত রিপোর্ট সংগ্রহ করেন। সাক্ষীদের জবানবন্দি ফৌঃ কাঃ বিঃ আইনের ১৬১ ধারা মোতাবেক জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন। উক্ত আলোচিত মামলাটির তদন্তকালে জানা যায় যে, মামলার ঘটনার ৪/৫ দিন পূর্বে তদন্তে প্রাপ্ত আসামী হিরা ও মনিদ্বয় দ্বিজেনকে বলে তোকে একটি কাজ করে দিতে হবে এবং কাজের বিনিময়ে তোকে ২০,০০০/( বিশ) হাজার টাকা দেব। দ্বিজেন তখন মনি ও হিরাকে বলে যে, কি কাজ করতে হবে। ঐ সময় মনি ও হিরা বলে যে, মুক্তার ছেলে জুয়েলকে জনৈক গজেন এর পরিত্যক্ত বাড়ীতে এনে দিতে হবে। তার পরিকল্পনা মতে মনি ও হিরা গজেন এর বাড়ীতে ঘটনার দিন ইং ২৬/১০/১৮ তারিখে অবস্থান করিতে থাকে ঐদিন মনি ্ এবং দ্বিজেন ভিকটিম জুয়েলকে ১৮.৩০ ঘটিকার সময় দ্বিজেনের বসত বাড়ীর দক্ষিনে বনকুড়ি টু কুমগ্রাম কাচা রাস্তা থেকে সুকৌশলে ডেকে জনৈক গজেন এর পরিত্যক্ত বাড়ীতে নিয়ে যায় সেখানে মনি ভিকটিম জুয়েলের মুখ গামচা দিয়ে বাঁধে হিরা জুয়েলের দুই হাত রশি দিয়ে বাধে মনি ও হিরাকে দ্বিজেন সহায়তা করে। তিনজনে মিলে ভিকটিম জুয়েলকে একটি পাটের বস্তার মধ্যে জোরপূর্বক ঢুকাইয়া তিনজনে বস্তার মুড়ি ধরে বনকুড়িগামী কাচা রাস্তার কালভাটের দিকে যায়। কিছুক্ষন পরে তাহারা বুঝতে পারে যে, বস্তার মধ্যে জুয়েল নড়াচড়া করছে না। তখন তারা তিন জনে বস্তার মুখ খুলে দেখে দেখে যে, জুয়েল মারা গিয়াছে। তখন তারা সিদ্ধান্ত নেয় যে, জুয়েলের লাশ গুম করবে এবং সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বনকুড়িগামী রাস্তার কালভাট হতে ২০০ হাত পশ্চিমে জনৈক জয়ন্ত এর নালা জমিতে কাদার ভিতরে জুয়েলের মৃতদেহ পুতে রাখে এবং কচুরিপানা দিয়ে ঢেকে রাখে। ঘটনার পর থেকে ভিকটিমের পিতা জুয়েলকে খোজাখুজি করেন এবং এক পর্যায়ে জিডি করেন। এমতবস্থায় ইং ২৮/১০/১৮ তারিখে সন্ধ্যার পর জয়ন্ত এর নালা জমিতে ৩ / ৪টি শেয়াল কচুরিপানার মধ্যে কোন কিছু নিয়া টানা হেচড়া করেচে দেখিতে পায় সাক্ষী রতন । তারপর সে ঘটনাস্থলে এগিয়ে যায় এবং ছোট বালকের লাশ দেখিতে পায় । তারপর সে এলাকার লোকজনদের অবগত করিলে লোকজন আসিয়া লাশ দেখে পুলিশকে সংবাদ দেয়। মামলার তদন্ত শেষে আসামী দ্বিজেন , মনি এবং হিরা দের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষে তদন্তকারী অফিসার এসআই আঃ মজিদ ৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড ধারা মোতাবেক সিংড়া থানার অভিযোগপত্র দাখিল করেন।