চাটমোহরের চাঞ্চল্যকর মুরগী ব্যবসায়ীকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন এবং ঘটনার মূল হত্যাকারীকে গ্রেফতার এবং হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত গামছা এবং বাইসাইকেল উদ্ধার। ঘটনাঃ ভিকটিম ইসমাইল হোসেন (২৯), পিতা-মৃত সানোয়ার হোসেন সাং-তেবাড়ীয়া, থানা-চাটমোহর, জেলা- পাবনা গত ইং-২২/০২/২০২৩ তারিখ দুপুর অনুমান ০১.০০ ঘটিকার সময় চাটমোহর থানাধীন হরিপুর হতে তেবাড়ীয়া সাকিনে তার মায়ের সাথে দেখা করার কথা বলে বাসা হতে বের হয়ে যায়। একই তারিখ অর্থাৎ ইং-২২/০২/২০২৩ তারিখ রাত্রী অনুমান ০৯.০০ ঘটিকার সময় ভিকটিম বাসায় ফিরে না আসায় ভিকটিমের স্ত্রী মোছাঃ মাহমুদা খাতুন মতেজা (২৬) তার ব্যবহৃত মোবাইল নং-০১৮৭০৭৬৭৪৭৫ হতে ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর ০১৭৪২৭৬৯৮১৩ তে কল করলে ভিকটিম তার স্ত্রীকে জানায় সে তেবাড়ীয়া সাকিনে তার মায়ের নিকট হতে অটোভ্যান যোগে বাসায় আসছে। এর কিছুক্ষণ পর হতে ভিকটিমের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়ায় ভিকটিমের স্ত্রী তার চাচা শ্বশুর আব্দুর রশিদ খন্দকারসহ তার ননদ মোছাঃ সোনিয়াকে বিষয়টি জানায়। তখন হতে ভিকটিমকে তার স্ত্রীসহ তার আত্মীয়স্বজন বিভিন্ন জায়গায় খোঁজা-খুজি করতে থাকে। খোঁজাখুঁিজর এক পর্যায়ে গত ২৭/০২/২০২৩ তারিখ বেলা অনুমান ১১.০০ ঘটিকার সময় ভিকটিমের স্ত্রী লোকমুখে শুনতে পায় চাটমোহর থানাধীন হরিপুর ইউপিস্থ বেলুড়ী মৌজার ধুলাউড়ি সাকিনে নলগাড়ী বিলে জনৈক মোঃ মনোরুদ্দিন প্রাং (৭৫), পিতা-মৃত মফিজ উদ্দিন, সাং-দয়ারামপুর, থানা-চাটমোহর, জেলা পাবনার ভুট্টার ক্ষেতের ভিতর একজন অজ্ঞাত পুরুষ ব্যক্তির মৃত দেহ পড়ে আছে। উক্ত সংবাদের প্রেক্ষিতে ভিকটিমের স্ত্রী মাহমুদা খাতুন মতেজা, ভাই মোঃ ইমরান (২৪), মা মোছাঃ নাজমা খাতুন (৫৫), সহ আরো অনেকেই ঘটনাস্থলে যায় এবং মৃত দেহটি চাটমোহর থানাধীন হরিপুর ইউপিস্থ বেলুড়ী মৌজার ধুলাউড়ি সাকিনে নলগাড়ী বিলে জনৈক মোঃ মনোরুদ্দিন প্রাং (৭৫), পিতা-মৃত মফিজ উদ্দিন, সাং-দয়ারামপুর, থানা-চাটমোহর, জেলা-পাবনার ভুট্টার ক্ষেতের ভিতর দক্ষিণ শিহরি অবস্থায় মৃত দেহ দেখতে পেয়ে ভিকটিমের পরিহিত লুঙ্গি, গেঞ্জি এবং মৃতদেহ দেখে ভিকটিম ইসমাইল এর মৃতদেহ সনাক্ত করে। বাদীনির ধারনা গত ইং ২২/০২/২০২৩ তারিখ রাত্রী অনুমান ০৯.০০ ঘটিকা হতে ইং ২৭/০২/২০২৩ তারিখ সকাল অনুমান ১১.০০ ঘটিকার মধ্যে যে কোন সময় অজ্ঞাতনামা আসামীগণ ভিকটিমকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হত্যা করতঃ লাশ গুম করার লক্ষ্যে বর্ণিত ভুট্টা ক্ষেতের মধ্যে লাশ লুকিয়ে রেখে চলে যায়। উপরোক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে চাটমোহর থানার মামলা নং-১৭, তারিখ-২৭/০২/২০২৩ খ্রিঃ ধারা-৩০২/২০১//৩৪ পেনাল কোড রুজু হয়। তদন্তকার্যক্রম মামলা রুজুর পর হতেই পাবনা জেলার মাননীয় পুলিশ সুপার জনাব মোঃ আকবর আলী মুন্সী মহোদয়ের নির্দেশনায় ও প্রত্যক্ষ তত্বাবধানে এবং আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) জনাব মোঃ মাসুদ আলম এবং সহকারী পুলিশ সুপার, চাটমোহর সার্কেল, মোঃ হাবিবুর রহমান এর নেতৃত্বে অফিসার ইনচার্জ চাটমোহর থানা, পাবনা এর একটি চৌকস টিমের যৌথ অভিযানে উক্ত চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ডের সাথে সরাসরি জড়িত মূল আসামী মোঃ রবিউল করিম (৩২), পিতা-মোঃ আরদোস আলী মৃধা, সাং-ধূলাউড়ি কুঠিপাড়া, থানা-চাটমোহর, জেলা-পাবনাকে ঢাকা জেলার মোহাম্মদপুর থানার নবদ্বয় হাউজিং এ জনৈক শহিদুল ইসলাম এর রিক্সা গ্যারেজ হতে গ্রেফতার করা হয়। আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে অত্র মামলার ঘটনার সহিত সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। অতঃপর গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ রবিউল এর দেখানো মতে ঘটনাস্থলে পাশ্বের্ ডোবা হতে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ০১টি গামছা, বাইসাইকেল এবং চাটমোহর থানাধীন ধূলাউড়ি কুঠিপাড়া সাকিনে উক্ত আসামীর শয়ন কক্ষের ভিতর আলমারীর ড্রয়ার হইতে ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ উক্ত আসামী নিজ হাতে বাহির করে দেওয়া মতে উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ রবিউল করিমকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা য়ায় যে, আসামী এবং ভিকটিম এর বাড়ী পাশাপাশি গ্রামে তারা একে অপরকে চাচা ভাতিজা বলে ডাকে। আসামী রবিউল করিম তার সংসারের অভাব অনটনের কারণে ঢাকা জেলার মোহাম্মদ থানা এলাকায় রিক্স্রা চালাইত। অপরদিকে ভিকটিম ইসমাইল হোসেন চাটমোহর থানাধীন হরিপুর রওশন মার্কেটে মুরগীর ব্যবসা করাকালে বিভিন্ন লোকজনের নিকট ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়লে ভিকটিম তার মুরগীর দোকান তার বন্ধু জহুরুলকে দেখাশুনার দায়িত্ব দিয়ে অনুমান ৬/৭ মাস পূর্বে ঢাকায় গিয়ে রিক্সা চালায়। আসামী এবং ভিকটিম দুইজন একই রিক্সা গ্যারেজে থেকে রিক্সা চালাতো। এইভাবে তাদের মধ্যে পরিচয় এবং সু-সর্ম্পক গড়ে ওঠে। ভিকটিম ইসমাইল তার সংসারের অনেক বিষয় আসামী রবিউল এর সাথে শেয়ার করে। ভিকটিম ইসমাইল একদিন আসামী রবিউল এর ব্যবহৃত মোবাইল ফোন দিয়ে তার স্ত্রীর নিকট ফোন দেয়। এর পর হতে ভিকটিম ইসমাইল এর স্ত্রী তার স্বামীর মোবাইল ফোন বন্ধ থাকলে মাঝে মধ্যেই আসামী রবিউল ইসলাম এর মোবাইলে ফোন দিয়ে তার স্বামীর খোঁজখবর নিতে থাকে। এভাবে মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে ভিকটিম ইসমাইল এর স্ত্রী মোছা: মাহমুদা খাতুন মতেজা এর সহিত আসামী রবিউল ইসলাম এর প্রেমের সর্ম্পক গড়ে উঠে। এরই ধারাবাহিকতায় ভিকটিম ইসমাইলকে ঢাকায় রেখে আসামী রবিউল করিম রিক্সা চালানো বাদ দিয়ে নিজ বাড়ীতে চলে আসে। আসামী রবিউল নিজ বাড়ীতে আসার পর গোপনে ভিকটিমের স্ত্রীর সহিত দেখা করে শারীরিক সর্ম্পক করে। ভিকটিম ইসমাইল ঢাকায় থাকার সু-বাদে আসামী রবিউল গোপনে ভিকটিমের স্ত্রী সহিত একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক করে। কিছুদিন পর গত ১৫/০২/২০২৩ তারিখ ভিকটিম ইসমাইল হোসেন ঢাকা থেকে তার নিজ বাড়ীতে চলে আসে। বাড়ীতে আসার পর জমি বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করে এবং এলাকায় অবস্থান করে পূণরায় মুরগীর ব্যবসা করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। ইসমাইল হোসেন বাড়ীতে ফিরে আসাতে এবং এলাকায় অবস্থান করে মুরগীর ব্যবসা করার কথা জানতে পেরে আসামী রবিউল তখন ভাবে ইসমাইল বাড়ীতে থাকলে ইসমাইল এর স্ত্রীর সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক বাধাগ্রস্ত হবে। ফলে আসামী রবিউল ইসলাম ভিকটিম ইসমাইল এর স্ত্রীকে দ্রæত আরো অধিক কাছে পাওয়ার জন্য ভিকটিম ইসমাইলকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে। ভিকটিম ইসমাইল আসামী বরিউল এর নিকট ঢাকা থাকা কালে মূর্তি ব্যবসার গল্প করেছিল। গল্প করাকালে ভিকটিম ইসমাইল মূর্তির ব্যবসার প্রতি লোভ থাকার বিষয়টি আসামী রবিউল জানতো। সেই মোতাবেক আসামী রবিউল গত ২১/০২/২০২৩ তারিখ সকাল অনুমান ১১.০০ ঘটিকার সময় চাটমোহর থানাধীন সন্ধোভা বাসস্ট্যান্ডে জনৈক লিমন খন্দকার এর চা-স্টলে বসে ইসমাইলকে জানায় তার নিকট ০১টি র্স্বণের পুতুল আছে এবং সেই পুতুল বিক্রয় করে দেওয়ার জন্য ভিকটিম ইসমাইলকে মিথ্যা প্রস্তাব দেয়। প্রস্তাব পেয়ে ভিকটিম ইসমাইল মূর্তি দেখতে চায়। তখন আসামী রবিউল মিথ্যাভাবে ভিকটিমকে জানায় মূর্তিটি তার জমিতে পূতে রাখা আছে। সেখান থেকে বের হয়ে আসামী রবিউল ভিকটিম ইসমাইলকে হত্যা করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার জন্য একই তারিখ অর্থাৎ ২১/০২/২০২৩ তারিখে নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম থানাধীন জোনাইল বাজার হতে ০১টি নতুন গামছা ক্রয় করে। পরিকল্পনা মোতাবেক আসামী রবিউল করিম তার বাইসাইকেলের হ্যান্ডেলের সাথে ০১টি লাইলনের পুরাতন বাজার করা ব্যাগের মধ্যে গামছা নিয়ে ইং ২২/০২/২০২৩ তারিখ রাত্রী অনুমান ০৮.২০ ঘটিকার সময় চাটমোহর থানামধীন ধূলাউড়ি সাকিনে জনৈক কাশেম মেম্বারের বসতবাড়ীর পশ্চিম পাশে অবস্থান করতে ছিল। সেখানে ভিকটিম ইসমাইলকে স্বর্ণের মূর্তি দেখানোর কথা বলে ঘটনার দিন ইং ২২/০২/২০২৩ তারিখ রাত্রী অনুমান ০৮.৪০ ঘটিকার সময় ডেকে নেয়। অতঃপর আসামী রবিউল ভিকটিম ইসমাইলকে তার বাইসাইকেলের পিছনে উঠিয়ে ঘটনাস্থল চাটমোহর থানাধীন হরিপুর ইউপিস্থ বেলুড়ী মৌজার ধুলাউড়ি সাকিনে নলগাড়ী বিলে জনৈক মোঃ মনোরুদ্দিন প্রাং (৭৫), পিতা-মৃত মফিজ উদ্দিন, সাং-দয়ারামপুর, থানা-চাটমোহর, জেলা-পাবনার ভুট্টার ক্ষেতের পাশে ফাঁকা জায়গায় নিয়ে যায়। ভুট্টার ক্ষেতের ফাঁকা জায়গায় বসে কথা বলার একপর্যায়ে আসামী রবিউল করিম দাড়িয়ে ভিকটিমের পিছনে গিয়ে আসামী রবিউল এর নিকট থাকা গামছা দিয়ে ভিকটিম ইসমাইল হোসেনকে পিছন দিক থেকে গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। হত্যা করার পর লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে ভিকটিম ইসমাইল এর মৃতদেহ দুই হাত ধরে টেনে উক্ত ভুট্টার ক্ষেতের মাঝখানে রেখে দেয়। এরপরে আসামী রবিউল করিম হত্যা কাজে ব্যবহৃত গামছা এবং ভিকটিমের নিকট থাকা মানিব্যাগ ও মোবাইল নিয়ে বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। ঘটনাস্থল হতে অনুমান আধা কিলো দূরে গিয়ে রাস্তার ধারে ডোবার ভিতর হত্যা কাজে ব্যবহৃত গামছাটি ফেলে দিয়ে ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল ও মানিব্যাগ নিয়া বাড়ীতে চলে আসে। বাড়ীতে আসার পরে ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের সিম ভেঙ্গে ফেলে দিয়ে মোবাইলটি তার শয়ন ঘরের ভিতর আলমারীর ড্রয়ারের মধ্যে রেখে দেয় এবং ভিকটিমের মানিব্যাগে থাকা ৪,৫০০/- বের করে নিয়ে উক্ত মানিব্যাগটি আসামী রবিউল এর বাড়ীর পাশে ডোবায় ফেলে দিয়ে তার নিজ শয়ন ঘরে যায়। ঐ সময় ভিকটিম ইসমাইল এর স্ত্রী আসামী রবিউলকে মোবাইল করে তার বাড়ীতে যেতে বলে। আসামী রবিউল ঐ রাতেই অর্থাৎ ২২/০২/২০২৩ তারিখ রাত্রী অনুমান ১১.৩০ ঘটিকার সময় ভিকটিক ইসমাইল এর স্ত্রীর নিকটে যায় এবং তার সহিত শারীরিক সম্পর্ক করে। শারীরিক সম্পর্ক করার পর আসামী রবিউল ঐ রাতেই তার নিজ বাড়ীতে এসে ঘুমিয়ে পড়ে। পরের দিন ২৩/০২/২০২৩ তারিখ সকালে ঘুম থেকে উঠে সকাল ০৯.০০ ঘটিকার সময় ঢাকায় চলে যায়। উদ্ধারকৃত আলামতের বর্ণনাঃ ১। ০১টি গামছা ২। ০১টি মোবাইল ফোন ৩। ০১ টি মানিব্যাগ ৪। ০১ টি চায়না ফোনিক্স বাই সাইকেল । গ্রেফতারকৃত আসামীর নাম ঠিকানাঃ ১। মোঃ রবিউল করিম (৩২), পিতা-মোঃ আরদোস আলী মৃধা, সাং-ধূলাউড়ি কুঠিপাড়া, থানা-চাটমোহর, জেলা-পাবনা।