৭/১০/২০১৯ খ্রিঃ সকাল ১১ ঘটিকার সময় জরুরি সংবাদ পেয়ে ইন্সপেক্টর আল মাহমুদ, ইনচার্জ, কালিতলা ফাঁড়ি, নওগাঁ এবং অফিসার ইন চার্জ, নওগাঁ সদর মডেল থানা, নওগাঁ সদর হাসপাতালে পৌঁছায়। সেখানে যেয়ে তারা জানতে পারে সদর থানাধীন বক্তারপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জনাব মোরশেদুল আলম ১০-১১ বছরের একটি মেয়েকে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। তিনি মেয়েটিকে ৬/১০/২০১৯ খ্রিঃ রাতে অসুস্থ অবস্থায় পেয়েছেন এবং অজ্ঞাতনামা ৪/৫জন লোক মেয়েটিকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছিল বলে মেয়েটি তাকে জানায়। পরবর্তীতে সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পরীক্ষা নিরীক্ষা করালে ধর্ষণ চেষ্টার কোন চিহ্ন পাওয়া যায়নি বলে জানা যায়। মেয়েটিকে দেখতে অতিঃ পুলিশ সুপার (সদর) ফারজানা হোসেন সদর হাসপাতালে যান এবং মেয়েটির সাথে কথা বলেন। জিজ্ঞাসাবাদে মেয়েটি তার নাম সাদিয়া, বাবাঃ অজ্ঞাত এবং মায়ের নাম জানায় সুমি। সে আরো জানায় যে তার ঠিকানা বগুড়া ওভারব্রিজের নিচে যেখানে সে ১০/১১ বছর ধরে বসবাস করে। তার ভাষ্যমতে, সে ভিক্ষা করে দিনাতিপাত করে এবং তার মা সুমি খুবি অসুস্থ এবং ব্রিজের নিচেই থাকে। পরবর্তীতে তার মা টাকার বিনিময়ে তাকে একটা লোকের কাছে বিক্রি করেছে, সে লোকটা তাকে নওগাঁ এনেছে। এবং কোনমতে সে লোকটাকে ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে নিজেকে রক্ষা করেছে।অতঃপর নওগাঁ জেলার সুযোগ্য পুলিশ সুপার প্রকৌশলী জনাব আবদুল মান্নান মিয়া, বিপিএম, মহোদয়ের নির্দেশে নারী পুলিশসহ ইন্সপেক্টর আল মাহমুদ মেয়েটিকে নিয়ে রাতে তার দেয়া ঠিকানা বগুড়ায় যায়। সেখানে যাবার পর শুরু হয় নতুন বিপত্তি। মেয়েটির দেয়া ঠিকানায় সাদিয়া বা সুমি নামের কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না, কেউ মেয়েটিকে চেনে না আবার মেয়েটিও কাউকে চিনেনা।পরবর্তীতে মেয়েটির সাথে কথোপকথনের সময় তার ভাষা শুনে আমাদের মনে হয় মেয়েটির বাড়ি ঢাকার আশেপাশে হতে পারে। কৌশলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে এবার সে জানায় বাবা-মা, ভাই, সৎ মায়ের মারধর সহ্য করতে না পেরে সে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে এবং তার প্রকৃত নাম বাবলি ওরফে শান্তা, বাবাঃ বাদশা, মাঃ বিজলী, সৎমাঃ আঙুরী; ঠিকানাঃ গাজীপুর চৌরাস্তা।বিষয়টি পুলিশ সুপার মহোদয়কে অবহিত করলে তিনি গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সাথে যোগাযোগ করার নির্দেশ প্রদান করেন। নির্দেশনা অনুযায়ী আল মাহমুদ পরেরদিন মেয়েটির দেয়া ঠিকানা গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর থানায় দিয়ে খোঁজ নিতে অনুরোধ জানায়। এস আই লেবু মিয়া সারাদিন খোঁজাখুঁজির পরও ঐ ঠিকানা খুঁজে পায়না। পরবর্তীতে অতিঃ পুলিশ সুপার (সদর) ফারজানা স্যারকে বিষয়টি অবহিত করলে তিনি পুলিশ সুপার মহোদয়ের সাথে আলোচনা করে বাবলিকে নিয়ে গাজীপুর যাওয়ার নির্দেশ দেন।নির্দেশনা মোতাবেক মেয়েটিকে নিয়ে আল মাহমুদসহ ১জন ATSI, ১জন নারী SI, 2 জন নারী কং গাজীপুর চৌরাস্তা যায়। সেখানে পৌছানোর পর মেয়েটি কিছু বলে না, কোনরকম সহযোগিতা ও করেনা। অতঃপর অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে কথা বলার পর সে রাত ৮টার দিকে বলে তার ঠিকানা চৌধরী পাড়া শহীদ বৃত্তি একাডেমির পাশে। অতঃপর স্থানীয় লোকজনের সাথে আলোচনা করে তাদের সহায়তায় চৌধুরী পাড়া ঐ স্কুলের সন্ধান পাওয়া যায় যা জয়দেবপুর সদর থানায় অবস্থিত। অতঃপর মেয়েটির বাবা মাকে খুঁজে মেয়েটিকে তাদের কাছে দিলে তারা খুশিতে কেঁদে ফেলে। পরে জয়দেবপুর সদর থানার জিডি নং ৫০৫ তাং ১০/১০/১৯ মূলে ওসি সাহেবের উপস্তিতি ও এলাকার লোকজনের উপস্থিতিতে মেয়েটিকে তার বাবা মায়ের নিকট হস্তান্তর করা হয়। অবশেষে কয়েকটি নির্ঘুম রাতের পর একটি সফলতার গল্প রচিত হয়। পুনশ্চঃ মেয়েটি গত ১৬/১২/১৮ খ্রিঃ তাং বাবা-মা ও সৎ মায়ের সাথে রাগ করে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়। অতঃপর ঢাকায় বিভিন্ন বাসায় কাজের মেয়ে হিসেবে কাজ করে এবং পরবর্তীতে সেখান থেকে পালিয়ে নওগাঁ আসে। তার বাবা টিভির মেকানিক এবং মুদি দোকানি।