বগুড়ায় বাল্যবিবাহ, যৌন হয়রানি, নারী নির্যাতন, শিশুশ্রম এবং সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষে বগুড়ার মাঠে ১০৫ শিক্ষার্থী কাজ করছেন। বগুড়া জেলা পুলিশ ও জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) এর উদ্যোগে বগুড়ার ১২ উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে হেল্পডেক্স খোলা হয়েছে। এসব হেল্পডেক্সের মাধ্যমে নির্যাতিতদের অভিযোগ গ্রহণ করা হয় এবং তাদের সার্বিক সহযোগিতা করা হয়।
বগুড়ার ১২ উপজেলায় এসব হেল্পডেক্সে ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের জুলাই পর্যন্ত ১ বছরে ১ হাজার ৬৬৫ অভিযোগ পড়ে। এসব অভিযোগের মীমাংসা হয় ১ হাজার ৪১৯টি। বিভিন্ন সময় হেল্পডেক্সের মাধ্যমে মামলা হয়েছে ৩০৪টি। আর জিডির পরিমাণ ২২২টি।
এই সংগঠনে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করেন পুষ্পা খাতুন। তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরেই এই সংগঠনের হয়ে কাজ করছেন। প্রত্যন্ত গ্রাম-গঞ্জের অবহেলিত শিশু, নারীদের নিয়ে তারা কাজ করছেন। বিশেষ করে অকালে বিয়ে ঠেকানো, শিশুশ্রম বন্ধ এবং ঝরে পরা শিক্ষার্থীদের স্কুলমুখী করাই তাদের কাজ। দেশ এবং সমাজের জন্য কাজ করতে পেরে তিনি নিজেকে ধন্য মনে করেন। এই স্বেচ্ছাসেবী ইতিমধ্যে সামাজিক কার্যক্রমে বিশেষ অবদানের জন্য ইউএনএফপিএ অ্যাওয়ার্ডও পেয়েছেন।
বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঁঞা বলেন, নারী এবং শিশু নির্যাতন রোধে অনেক যুব স্বেচ্ছাসেবী আমাদের সাথে কাজ করতে আগ্রহী হয়ে উঠছে। এটাকে লক্ষ্য করেই আমাদের আজকের এই সমাবেশ। মূলত অসহায় নারী ও শিশুদের হেল্পডেক্স তৈরি করা হয়েছে। সেখানে আমরা নারী এবং শিশু সংশ্লিষ্ট ১২ ধরনের অভিযোগ পেয়ে থাকি। হেল্পডেক্সের মাধ্যমে অনেকগুলো ঘটনা মীমাংসা করতে আমরা সক্ষম হয়েছি। যার ফলে বিশাল সংখ্যক মামলা থেকে অনেকগুলো পরিবার রক্ষা পেয়েছে। শুধু তাই নয় যুব স্বেচ্ছাসেবী যারা আছে তারাও বাল্যবিবাহ রোধে বেশ ভালো ভূমিকা রাখছে। প্রত্যেকের নিজ নিজ এলাকাতে যদি বাল্যবিবাহ হয়ে থাকে বা বিবাহের বিষয়টি সামনে আসে তখন তারা আমাদের বা ইউএনএফপিএ এর যিনি কর্মকর্তা আছেন তার মাধ্যমে খবর দেন তখন আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিলে এটি বন্ধ করতে সক্ষম হই। আমার মনে হয়, যারা যুব স্বেচ্ছাসেবী আছেন তাদের যদি আরো একটু প্রশিক্ষণ দেয়া যায় এবং আরো একটু যদি সচেতন করা যায় তাহলে আমাদের এই কার্যক্রম আরো বেশি এগিয়ে যাবে। বগুড়ার ১২টি উপজেলায় অসহায় নারী এবং শিশুদের নিয়ে যে কার্যক্রম শুরু করেছি তাতে আমরা বেশ সাড়া পেয়েছি। এই কার্যক্রমটা যদি সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়া যায় তাহলে সারা দেশে নির্যাতিত এই নারী এবং শিশুরা উপকৃত হবে।
ইউএনএফপিএ এর বগুড়া প্রতিনিধি তামিমা নাসরিন জানান, আমাদের হেল্পডেক্সে অভিযোগ করতে আশা নারীদের পরিচয় সম্পূর্ণ ভাবে গোপন রাখা হয়। অনুমোদিত পুলিশ ছাড়া অন্য কেউ এসব রেজিস্ট্রার দেখতে পায় না। ফলে যেকোনো ধরনের নির্যাতনের শিকার নারীরা এখানে মন খুলে অভিযোগ করতে পারেন। এই গোপনীয়তার মাধ্যমে আমরা সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থা তৈরি করতে পেরেছি। তিনি আরো বলেন, নারী নির্যানত বাল্যবিবাহ বন্ধের লক্ষে আমরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় সাধারণ মানুষদের সচেতন করছি।
বুধবার এসব স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। জেলা পুলিশের আয়োজনে সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঁঞা। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহাম্মদ। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, পদোন্নতি প্রাপ্ত পুলিশ সুপার আব্দুল জলিল, বগুড়া পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহাদৎ আলম ঝুনু, বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া সার্কেল) সনাতন চক্রবর্তী, বগুড়া সদর থানার অফিসার ইনচার্জ বদিউজ্জামান