ক্লুলেস হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন, আসামী গ্রেফতার, লুন্ঠিত মোবাইল, ভ্যানের ০৪ টি ব্যাটারী, চাবি ও ভ্যান বিক্রয়ের টাকা উদ্ধার এবং হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত বাঁশের লাঠি ও লুংগি জব্দ
০৮ অক্টোবর, ২০২৩
১। গত ০৩/১০/২০২৩ খ্রিঃ বিকাল আনুমানিক ০৪.৩০ ঘটিকায় শাহজাদপুর থানা পুলিশ অত্র থানাধীন ০৩ নং পোতাজিয়া ইউনিয়নের মন্ডলপাড়াস্থ জনৈক আব্দুল হাকিমের ধান ক্ষেত থেকে অজ্ঞাতনামা ১৫/১৬ বছর বয়সী এক যুবকের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে। ২। শাহজাদপুর থানা পুলিশ উক্ত অজ্ঞাতনামা যুবকের পরিচয় শনাক্ত করাসহ তার হত্যাকারী গ্রেফতারের জন্য অভিযানে নেমে পড়ে এবং পার্শ্ববতী পাবনা জেলার বেড়া, ফরিদপুর ও সাথিয়া থানাকে অবহিতসহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় গুরুত্ব সহকারে উক্ত বিষয়টি প্রচার ও প্রকাশ করেন। ০৪/১০/২০২৩ খ্রিঃ বিকাল আনুমানিক ০৪.০০ ঘটিকায় মৃত রাসেলের পরিবার ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পেরে শাহজাদপুর থানাতে এসে ভিকটিমের লাশ দেখে চিহ্নিত করে। ভিকটিমের নাম মো: রাসেল (১৫), পিতা- মো: রবিউল ইসলাম, সাং-ডেমরা, থানা-ফরিদপুর, জেলা-পাবনা। মৃত রাসেলের বাবা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামী করে শাহজাদপুর থানাতে একটি লিখিত এজাহার দিলে অফিসার ইনচার্জ হত্যা মামলা রুজু করেন। যার শাহজাদপুর থানার মামলা নং-৫/৪৩৭, তাং- ০৪/১০/২০২৩ ইং, ধারা- ৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড। ৩। মৃত রাসেলের পরিবারকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, মৃত রাসেলের বাবা রবিউল ইসলাম শারীরিক প্রতিবন্ধী। তিন ভাইয়ের মধ্যে সে ছিল মেঝ ছেলে। তার বড় ভাই রাজেব (২০) পেশায় একজন পিক আপ চালক । তার ছোট ভাই রাকিবুল (১০) বাঘাবাড়িতে তেলের ডিপোতে থাকে । মৃত রাসেল সংসারে অভাবের কারনে পড়াশোনা করতে পারে নাই। সে বাঘাবাড়িতে তেল ডিপোতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করত। ২/৩ মাস পূর্বে সে বাঘাবাড়ি থেকে নিজ এলাকাতে চলে যায় এবং তার আত্নীয় জনৈক কাশেমের ব্যাটারি চালিত ভ্যান ভাড়া নিয়ে চালাত। গত ০১/১০/২০২৩ খ্রিঃ রোজ রবিবার বিকাল আনুমানিক ০৪.৩০ ঘটিকায় মৃত রাসেল তার ব্যাটারি চালিত ভ্যান নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। এরপর রাসেল রাত গভীর হয়ে গেলেও বাসায় ফিরে না আসলে তারা বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুজি করে। কোথাও খুজে না পেয়ে তার পরিবার হয়ে পড়ে দিশেহারা। ৪। সিরাজগঞ্জ জেলার সম্মানিত পুলিশ সুপার জনাব মোঃ আরিফুর রহমান মন্ডল, বিপিএম (বার), পিপিএম (বার) মহোদয়ের দিক-নির্দেশনায় এবং শাহজাদপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জনাব মোঃ কামরুজ্জামান, পিপিএম-সেবা ও অফিসার ইনচার্জ জনাব মোঃ খায়রুল বাশারদ্বয়ের তত্ত্বাবধানে শাহজাদপুর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) জনাব মো: শাখাওয়াত হোসেন এবং এসআই (নি:) মো: শারফুল ইসলাম দ্বয়ের নেতৃত্ত্বে শাহজাদপুর থানা পুলিশের একটি চৌকশ টিম ০৫/১০/২০২৩ খ্রিঃ রাত আনুমানিক ০৩.৩০ ঘটিকায় অত্র থানাধীন মন্ডলপাড়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ঘটনার সাথে জড়িত আসামী ১। মো: জাহাঙ্গীর (৩১), পিতা- মো: সাঈদ মন্ডল, গ্রাম- মন্ডলপাড়া, থানা-শাহজাদপুর, জেলা-সিরাজগঞ্জকে গ্রেফতার করে এবং তার দেখানো মতে মৃত রাসেলের মোবাইল, ভ্যানের চাবি ও ভ্যান বিক্রির নগদ ৫,৫০০/- টাকা, ০৪ টি ব্যাটারি এবং হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত লুংগি ও বাঁশের লাঠি উদ্ধারপূর্বক জব্দ করেন। ৫। গ্রেফতারকৃত আসামী জাহাঙ্গীরকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, সে পেশায় একজন সিএনজি চালক ছিল । গত ৫ বছর আগে সে তার সিএনজি বিক্রি করে দেয়। এরপর সে রাজমিস্ত্রীর কাজ করত৷ কিন্তু অল্প আয় দিয়ে তার সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। অভাবের তাড়নায় সে ভ্যান ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে। সেই পরিকল্পনা মোতাবেক সে গত ০১/১০/২০২৩ খ্রিঃ বিকাল ০৪.০০ ঘটিকায় ডেমরা বাজারে যায় এবং টার্গেট খুজতে থাকে। একই তারিখ রাত আনুমানিক ০৭.৩০ ঘটিকায় সে ভিকটিম মৃত রাসেলকে ভ্যানসহ দেখতে পেয়ে চরাচিথুলিয়া মন্ডলপাড়াতে ঘুষি ( গোবরের তৈরি) নিয়ে আসার জন্য ৭০ টাকা চুক্তি করে তার ভ্যানে ওঠে। এরপর একই তারিখ রাত আনুমানিক ০৮.০০ ঘটিকায় অত্র থানাধীন মন্ডলপাড়া এলাকায় এসে ভ্যান থামায়ে পাশেই মাঠের মধ্যে বস্তা আছে মর্মে তাকে নিয়ে মাঠের মধ্যে যায়। এরপর সে বালুর মাঠে গিয়ে রাসেলকে মেরে ফেলার ভয় দেখায় । সে পাশেই থাকা একটি বাশের লাঠি দিয়ে রাসেলের মাথার বাম পাশে আঘাত করলে রাসেল মাটিতে পড়ে যায়। এরপর সে রাসেলের পরিধেয় লুংগি তার গলায় পেচিয়ে ধরে মৃত্যু নিশ্চিত করে। সে রাসেলের পকেটে থাকা মোবাইল ও ভ্যানের চাবি নিয়ে নেয় এবং লাশ টেনে ধান ক্ষেতের মধ্যে নিয়ে গিয়ে ফেলে রাখে। এরপর সে রাস্তায় এসে ভ্যান নিয়ে চলে যায়। ৬। গ্রেফতারকৃত আসামী জাহাঙ্গীর এর বিরুদ্ধে শাহজাদপুর থানাতে তিনটি চুরি মামলা রয়েছে। সে রাসেলকে হত্যা করার কথা স্বীকার করেছে। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।