ঈশ্বরদী থানার চাঞ্চল্যকর ডাকাতির ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন, লুন্ঠিত মালামাল হলুদ ও ছিনতাইকৃত ট্রাক উদ্ধার সহ সংঘবদ্ধ আন্তঃজেলা ডাকাত দলের ০৩ সদস্য আটক
১১ মার্চ, ২০২৩
ঈশ্বরদী থানার চাঞ্চল্যকর ডাকাতির ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন, লুন্ঠিত মালামাল হলুদ ও ছিনতাইকৃত ট্রাক উদ্ধার সহ সংঘবদ্ধ আন্তঃজেলা ডাকাত দলের ০৩ সদস্য আটক । গত ইং-১৫/০২/২০২৩ ইং তারিখে ঈশ্বরদী থানাধীন দাশুড়িয়া এলাকায় একটি হলুদ চাতাল মিলের সামনে ২০৮ বস্তা হলুদ (মূল্য অনুমান ২৫ লক্ষ টাকা) বিক্রয়ের উদ্দেশে মামলার বাদী রাজিব হোসেন তার নিজস্ব ১৫ টনি টাটা ট্রাকে রাখে। সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র একটি প্রাইভেট কারে ১৬/০২/২০২৩ তারিখ রাত্রি অনুমান ১২.৩০ থেকে ০১.০০ টার মধ্যে ঘটনাস্থলে এসে নিজেদেরকে র্যাব পরিচয় দিয়ে দুই জন নাইটগার্ডকে জোরপূর্বক প্রাইভেটকারে তুলে নিয়ে চোখ বেধে ফেলে। অপরাধী চক্রের অন্যান্য সদস্যরা ট্রাকটির লক ভেঙ্গে হলুদ বোঝাই ট্রাকটি সুকৌশলে নিয়ে চলে যায়। যাওয়ার সময় পাবনা থানাধীন রেলগেইট এলাকায় (ঘটনাস্থল থেকে অনুমান ৩০ কিমি দূরে) দুই জন নাইটগার্ডকে ফেলে রেখে চলে যায়। প্রায় ৪৫ লক্ষ টাকার হলুদ ও ট্রাক হারিয়ে পাগল প্রায় মোঃ রাজিব হোসেন বিষয়টি ঈশ্বরদী থানা পুলিশকে জানালে থানায় একটি দস্যুতার মামলা হয় যার নং-৩৩ তাং-১৭/০২/২০২৩ইং, ধারা- ১৭১/৩৯৪ পেনাল কোড । পাবনা জেলার সুযোগ্য পুলিশ সুপার জনাব মোঃ আকবর আলী মুনসী মহোদয়ের নির্দেশনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) জনাব মাসুদ আলম, ঈশ্বরদী সার্কেলের অতিঃ পুলিশ সুপার জনাব বিপ্লব কুমার গোস্বামী , ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জ জনাব অরবিন্দ সরকার, এসআই (নিঃ)/ সুব্রত কুমার ঘোষ এর সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী টিম কাজ শুরু করে। প্রথমে সিসি টিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, লুন্ঠিত মালামাল সহ ট্রাকটি যমুনা সেতু পার হয়ে গেছে। তখন পুলিশ সুপার মহোদয়ের নির্দেশনায় পুরো টিমকে ৫/৬ টি ভাগে ভাগ করে টাংগাইল, গাজীপুর, ঢাকা ও নারায়নগঞ্জ এলাকায় হলুদের আড়ত এলাকায় পাঠানো হয়। ঈশ্বরদী থানার এস.আই(নিঃ)/ সুব্রত কুমার ঘোষের নেতৃত্বে ০৮ সদস্যের একটি টিম টাঙ্গাইল জেলা সহ আশেপাশের জেলার হলুদের আড়তে গোপনে অবস্থান করে অনুসন্ধান করতে থাকে। বিভিন্ন হলুদের আড়তে গিয়ে বাদীর লুন্ঠিত হলুদের নমুনা নিয়ে আড়তের মালিককে দেখানো হয় এবং সন্দেহভাজন কোন ব্যাক্তি হলুদ বিক্রি করতে আসলে দ্রুত জানানোর জন্য মোবাইল নাম্বার প্রদান করা হয়। এরই ফলশ্রুতিতে সকলের অক্লান্ত পরিশ্রমের প্রথম সফলতা হিসেবে ১৯/০২/২০২৩ তারিখ সকাল অনুমান ০৯.৩০ ঘটিকার সময় জানা যায যে, লুন্ঠিত ২০৮ বস্তা হলুদের মধ্যে ২৫ বস্তা হলুদ গত ইং ১৭/০২/২০২৩ তারিখ আশুলিয়া থানাধীন বাইপাইল এলাকায় একটি পাইকারি মুদি দোকানে সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সদস্যরা ১,৬২,০০০/=(এক লক্ষ বাষট্টি হাজার ) টাকায় বিক্রি করেছে। দোকানদার ৬২,০০০/=(বাষট্টি হাজার )টাকা নগদ ও এক লক্ষ টাকার চেক প্রদান করেছে। দোকানদারকে দিয়ে ডাকাত দলের সদস্যদের মোবাইলে জানানো হয় যে, চেকের এক লক্ষ টাকা নগদ নিয়ে যাওয়ার জন্য। ডাকাত দলের সদস্যরা বাইপাইলে নগদ এক লক্ষ টাকা নেওয়ার জন্য রওনা হয়। অতিঃপুলিশ সুপার জনাব মাসুদ আলম এবং ঈশ্বরদী সার্কেলের নেতৃত্বে একটি টিম ইতোমধ্যে বাইপাইল এলাকায় অবস্থান নেয়। ১২.৩০ ঘটিকার সময় ডাকাতদলের দুই সদস্য বিল্লাল ও রিপন হলুদ বিক্রয়ের অবশিষ্ট এক লক্ষ টাকা নেওয়ার জন্য বাইপাইলে আসলে তাদেরকে ধৃত করা হয়। আসামীদের দেখানো মতে বাইপাইলে উক্ত দোকান হতে ২৫ বস্তা হলুদ ওজন ১২৫০ কেজি উদ্ধার করা হয়। আসামীদ্বয়ের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে টাঙ্গাইল জেলাধীন মির্জাপুর থানা এলাকা হতে আরো ১৪৩ বস্তা হলুদ ওজন ৭১৫০ কেজি হলুদ উদ্ধার হয়। আসামী বিল্লাল ও রিপনদ্বয়কে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। অপরদিকে ছিনতাইকৃত ট্রাক উদ্ধারের অভিযান অব্যাহত থাকে। আভিযানিক দল আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদ ও আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ট্রাকের অবস্থান সনাক্ত করতে সক্ষম হয়। গত 23/02/2023 খ্রিঃ তারিখে গাজীপুরের বাসন থানাধীন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ঘটনার সাথে সরাসরি জড়িত ডাকাত সদস্য 1. হালিম @ চুকা @চিকু (দিনাজপুর) কে ছিনতাইকৃত ট্রাকসহ গ্রেফতার করা হয়। উক্ত আসামী হালিম কে জিজ্ঞাসাবাদ করে অত্র মামলার গুরুত্বপুর্ন তথ্য পাওয়া গেছে যা ডাকাত দলের অন্যান্য সদস্যদের আটক করতে সহায়তা করবে। এছাড়া গ্রেফতারকৃত আসামী হালিম, বিল্লাল ও রিপনগন বিজ্ঞ আদালতে তাদের দোষ স্বীকার করে ফৌঃকাঃবিঃ ১৬৪ ধারা মোতাবেক জবানবন্দি প্রদান করেছে। উদ্ধারকৃত মালামালের বর্ণনাঃ ১. ৮,৪০০ কেজি হলুদ (মূল্য অনুমান ২২,০০,০০০/=( বাইশ লক্ষ টাকা) ২.একটি ১৫ টনি টাটা ট্রাক (মূল্য অনুমান ২০,০০,০০০/= (বিশ লক্ষ) টাকা। ৩. ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত আসামীদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ০৩ টি । গ্রেফতার কৃত আসামীদের নাম-ঠিকানাঃ ১। মোঃ হালিম মিয়া চুকা চিকু (৪০), পিতা- মোঃ মোবাইল আলী ,সাং- মেলাগাছি, থানা- বোচাগঞ্জ, জেলা- দিনাজপুর । ২। মোঃ রিপন মিয়া (৩২), পিতা- মোঃ মফিজ উদ্দিন, সাং-দেওড়া , থানা- মির্জাপুর, জেলা- টাঙ্গাইল। ৩। মোঃ বেল্লাল ফকির (৩৫), পিতা- মোঃ মোজাহক ফকির, সাং-চরশিশুয়া, থানা- ইসলামপুর, জেলা- জামালপুর। উপরোক্ত আসামীগন একটি আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সদস্য। তারা সমগ্র বাংলাদেশে স্থানীয় এজ্ন্টে দিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে এবং অভিনব পন্থায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে ডাকাতির মাধ্যমে মালামাল লুট করে থাকে। উপরোক্ত আসামীদের বিরুদ্ধে ডাকাতি সহ বিভিন্ন ধারায় একাধিক মামলা রয়েছে। ডাকাতচক্রের অন্যান্য সদস্যদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।